কাঁদছে বাংলাদেশ, কাঁদছে তামিম-মুশফিকরাও
আর প্রতিদিনের মতো, স্কুল শেষে বাড়ি ফেরার কথা ছিলো ছোট্ট কোমলমতি শিশুদের। কিন্ত কে জানতো, এক পলকে শেষ হয়ে যাবে সব কিছু। চিরদিনের মতো ছুটি হলো। ফেরা হবে না স্কুলের সেই চিরচেনা ক্যাম্পাসে। ফেরা হবে না বাড়ির পথ ধরে। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ যাদের কলকাকলীতে মুখরিত হতো, এক বিমান দুর্ঘটনায় নিস্তব্ধ সব কিছু। এক নিমেষে অগণিত মা-বাবার কোল খালি হওয়ার আর্তনাদ ভাসছে আকাশ- বাতাসে। বাতাসে লাশের পোড়া গন্ধ। কতগুলো ফুলে পুড়ে যাওয়ার আর্তনাদ-আহাজারিতে ভারী চারপাশ। এই ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে সারা দেশে। এক সাথে এতো কোমলমতি প্রাণের করুণ পরিণতি, শোকাহত করেছে ক্রীড়াঙ্গণকেও। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল প্রার্থনা জানিয়ে সামাজিক মাধ্যমে লিখেন, যা হয়েছে ও হচ্ছে, সবকিছুই প্রচণ্ড বেদনাদায়ক। আমাদের হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে, আমরা বিধ্বস্ত। সেই সঙ্গে শিশুদের কোন রক্তাক্ত ছবি-ভিডিও শেয়ার না করার অনুরোধও জানান তিনি।
টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক লিটন দাস উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজে হতাহতদের প্রতি অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে সমবেদনা জানান । প্রার্থনা করেন যেনো দ্রুত এই শোক কাটিয়ে উঠতে পারেন স্বজনহারার মানুষরা। আপনজন হারানোর কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা যাতে সৃষ্টিকর্তা সবাইকে দেন তার প্রার্থনা করেন। মাশরাফি বিন মর্তুজা উত্তরার ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশের ভাষাটাও হারিয়ে ফেলেছেন। আহত সকলের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন। কঠিন সময়ে সবাইকে পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। যাদের সাহায্যের প্রয়োজন তাদের প্রতি উদার হওয়ার জন্য বলেছেন ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাস্টিক।
মিরপুরে প্রথম টি-টোয়েন্টি জয়ের আনন্দ নিমেষেই মিলিয়ে গেছে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের। মুস্তাফিজুর রহমান নিজের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে লিখেছেন, মাইলস্টোন স্কুলে এয়ারক্রাফট দুর্ঘটনার খবর শুনে মন খারাপ লাগছে। যারা এই দুর্ঘটনায় ভুক্তভোগী, তাদের জন্য দোয়া করছি। তাসকিন-মিরাজ-শরিফুলরাও ব্যথিত এই আকস্মিক দুর্ঘটনার জন্য। শিশুদের না ফেরার দেশে পারি জমানো, তাদের হৃদয়কে ক্ষত-বিক্ষত করেছে। যারা এখন অতীত তাদের জন্য প্রার্থনা করেছেন জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। শুধূ ক্রিকেটাররা নয়, এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও। বাংলাদেশ-পাকিস্তান দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে, এক মিনিটের নীরবতা পালন করা হবে মাইলস্টোন ট্র্যাজেডিতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে। দুদলের ক্রিকেটাররা খেলবেন কালো ব্যাজ পড়ে।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন সভাপতি বিশেষ বার্তায় নিহত ও আহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সংহতি প্রকাশ করেন। মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি নিয়ে ধারাবাহিক পোস্ট দিয়েছেন জাতীয় দলের ফুটবলার মোরসালিন। কখনো শিশুদের আইডি কার্ডের ছবি পোস্ট করে খোঁজ করেছেন অভিভাবকদের। কখনোবা রক্ত চেয়ে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন। সতীর্থের সাথে যোগ দিয়েছেন আরেক ফুটবলার রাকিব হোসেন। নেপালের বিপক্ষে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের শিরোপা জিতে মাইলস্টোন ট্র্যাজেডিতে নিহত-আহতদের প্রতি উৎসর্গ করেছেন আফঈদারা। ম্যাচ শুরুর আগেও শিশুদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন বাংলাদেশ ও নেপালের ফুটবলাররা। এতো এতো সমবেদনা, সন্তান হারানোর বেদনা হয়তো ভুলিয়ে দিতে পারবেন না ক্রীড়াঙ্গণের এই শোক। কিন্তু আর কতদিন… আর কত শিশুর প্রাণ এভাবে ঝড়ে যাবে, তার জবাব কি রাষ্ট্র দিতে পারবে?


